Skip to main content

Symbolic Representation of Life-Philisophy in the Performing Arts of Tripura Culture



ত্রিপুরা সংস্কৃতির নৈপুন্য প্রদর্শনী শিল্প
ও লুকায়িত জীবন দর্শন


-বরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা


 ভারতীয় উপ-মহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ত্রিপুরাদের মত বাংলাদেশে বসবাসরত ত্রিপুরাদেরও রয়েছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি। এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদির অন্যতম দিক হ”েছ পারফর্মিং আর্টস  বা নৈপুন্য প্রদর্শনী শিল্প।
ঐতিহ্যবাহী এসব নৈপুন্য প্রদর্শনী শিল্পের মধ্যে নিহিত রয়েছে জীবনের অনেক গুরত্বপূর্ণ দর্শন ও দিক নির্দেশনা যা অনুসরণ করে এবং প্রাত্যহিক জীবনে যেগুলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে আমরা আমাদের জীবনকে করতে পারি সমৃদ্ধ ও পরিশিলিত। এ নিবন্ধে আমি সেই জীবন দর্শন ও নির্দেশনার উপরই আলোকপাত করতে চাই। 

(এক) কাথাররক মাসানায় বা মাঙ্গঁলিক নৃত্য


 কাথাররক মাসানায় বা মাঙ্গঁলিক নৃত্য “বোতল নৃত্য” নামেই বেশি পরিচিত। অত্যন্ত জনপ্রিয় ও দৃষ্টি নন্দন এই নৃত্য সাম্প্রতিক কালের মঞ্চ  সংস্কৃৃতির যুগে বেশ প্রতিপত্তির আসন দখল করেছে এবং সুপরিচিতি অর্জন করেছে। কিš‘ মূলত এই নৃত্য ত্রিপুরাদের জীবনঘনিষ্ঠ এবং সামাজিক জীবনেরই একটি অবি”েছদ্য অংশ। সমৃদ্ধ পরিবারগুলোর বিবাহ অনুষ্ঠানে এই নৃত্য পরিবেশন করা হয় অনেকটা প্রতিযোগীতার ভঙ্গিঁতে এবং সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ কামনায়। বর পক্ষ এবং কনে পক্ষ দুই দলের নৃত্যশিল্পীরা এই নৃত্য পরিবেশন করে অনেকগুলো ভারসাম্যসূচক উপকরণ সহকারে।

শিল্পীদের প্রত্যেকের দুই হাতে থাকে দুইটি থালা, মাথায় একটি মদ-পূর্ণ বোতল যার শীর্ষে থাকে একটি প্রজ্জ্বলিত মোমবাতি। বাঁশির সুরে সুরে কাথাররক মাতাই এবং সমবেত দর্শকদের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন শুরু করে। নৃত্য পরিবেশনের পুরোটা সময়ই তাঁদের হাতে থালা এবং মাতায় বোতল ধারণ করে রাখতে হয়। বিভিন্ন তাল-লয়ে নৃত্য-নৈপুন্য প্রদর্শনের এক পর্যায়ে শিল্পীরা জলপূর্ণ কলসীর উপর আরোহণ করে এবং কলসীর উপর ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন মুদ্রার নৃত্য পরিবেশন করেন। সর্বশেষে কলসীর উপর একপায়ে দন্ডায়মান অবস্থায় মাথায় প্রজ্জ্বলিত মোমবাতি সমেত মদপূর্ণ বোতল ও দুই হাতে দু’টি থালা ধারণ করে রেখে ভারসাম্যের উত্তম উৎকর্ষতা প্রদর্শন করা হয়।

ত্রিপুরারা বিশ্বাস করেন, যে পক্ষ এই চারটি উপকরণের ভারসাম্য বজায় রেখে অধিকক্ষণ নৃত্য প্রদর্শন করতে পারবে কাথারক দেবতার আশীর্বাদে সে পক্ষই পারিবারিক জীবনে নেতৃত্ব দান করবেন। কিভাবে এই নেতৃত্ব ও প্রতিপত্তি অর্পিত হয় তার এক বিশাল তাৎপর্য নিহিত রয়েছে এ নৃত্য, নৃত্যের উপকরণ ও সেগুলোর ভারসাম্য ধরে রাখার মধ্যে।

প্রজ্জ্বলিত মোমবাতি  হচ্ছে জ্ঞানের প্রতীক, মদপূর্ণ বোতল হচ্ছে সম্মান ও ক্ষমতার প্রতীক, থালা হচ্ছে ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্যের প্রতীক আর জলপূর্ণ কলসী হচ্ছে  স্থিতিশীলতা ও কল্যাণের প্রতীক।

আমাদের জাগতিক জীবনে বা পারিবারিক জীবনে নেতৃত্বের জন্য এই চারটি উপকরণ আবশ্যিক এবং এই উপকরণগুলোর অর্থাৎ জ্ঞান, ক্ষমতা, ধন-সম্পদ ও কল্যাণ চিন্তা/স্থিতিশীলতা এগুলোর মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন। যাদের এই উপকরণগুলো আছে এবং যারা এগুলোর সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে পারিবারিক জীবনে এবং সামাজিক জীবনে তারাই নেতৃত্ব অর্জন করে।

ক্রম গুরুত্বের দিক দিয়ে জ্ঞানের  স্থান হচ্ছে সবার উপরে। তারপর রয়েছে সম্মান বা ক্ষমতা; তৃতীয়  স্থানে ঐশ্বর্য। আবার জ্ঞান, ক্ষমতা, ধন-সম্পদ এসবই পরিচালিত হতে হবে কল্যাণের উদ্দেশ্যে।
 
(দুই) বাংচুচু বাংগ্রাই গ্রাইঃ একটি শিশুতোষ ছড়া

এরকম অনন্য শিক্ষা-দর্শনের আরেক রত্ন ভান্ডার হলো জনপ্রিয় একটি শিশুতোষ ছড়া যেটা খেলচছলে শিশুদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। স্মরণাতীতকাল থেকে প্রচলিত এই ককবরক ছড়াটি হতে পারে কিন্ডার গার্টেন স্কুলিং বা খেলাচছলে পড়াশোনার একটি চিরন্তন (দৌপদী) উদাহরণ।

এই ছড়া উপস্থাপনের জন্য মা-বাবারা বা শিশুদের  যত্নকারীরা বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে হাঁটু বাজ করে পায়ের উপরে শিশুদের বসায়। তারপর পা নাচিয়ে শিশুকে দোলনার মত দুলিয়ে দুলিয়ে ছড়াটি উপস্থাপন করেন-

"বাংচুচু বাংগ্রাই গ্রাই
আসরাই বফাং কাঃদং
মান্দার চপারা চপ্রদং
মুইফারাই বুদুকবায় নক খাদং
তক্তুই বখলং বাই নক তাংদং
মুইতক বকংবায় সংসাদং
ওয়াতোয়-নবার ফাইদং
বারোং মাতাই মাসাদং
অ--অ--অ বজাং কালাইন'
বজাং কালাইয়া
গাম খাইয়ই নাইদি দ'।

অ--অ--অ রাংচাক বুলুংগ' কালাইখায় 
রাংচাক খলই লাদি,
রুফাইন বুলুংগ কালাইখায়
রুফাইন খলই লাদি,
অওয়ান বুলংগ কালাইখায়
অওয়ান খলই চাদি।

তকখি বুলংগ কালাইখায়
তকখি বুলজাকনায়,
ওয়াকখি বুলংগ কালাইখায়
ওয়াকখি বুলজাক নায়-
মেনাম মেনাম মেনাম!!!

খেলাচছলে এই ছড়াটি শিশুদের নিকট বিনোদন সহকারে এমন অসংখ্য বার উপস্থপন করা হয় যে প্রতিটি শিশুই সারাজীবন এই ছড়াটি মনে রাখতে পারে। কিন্তু যে বিষয়টি বরাবর আড়ালে থেকে যাচ্ছে বা মিস হয়ে যাচ্ছে তা হলো এই ছড়াটির ভিতরে লুকায়িত অনন্য শিক্ষা যা হতে পারত শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের জন্য বা জীবন যাপনের জন্য এক অমূল্য দর্শন। সেই উদ্দেশ্যে ছড়াটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বড়বেলায় অর্থাৎ কৈশোরের শুরুতে আর একবার ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। নিম্নে আমি সেই তাৎপর্যটি বিশ্লেষণ করার প্রয়াস নিচ্ছি"
 
আমাদের জীবনটা হচ্ছে ঝঞ্জা বিক্ষুুদ্ধ সময় বেয়ে ওই কাঠবিড়ালিটির বা টাকি মাছের বৃক্ষ আরোহনের মত। ঝড়ের দোলায় আন্দোলিত গাছ থেকে কোথায় যেয়ে পতিত হই সে ব্যাপারে সদা সচেতন হওয়ার প্রয়োজন। “রাংচাক বুলংগ' কালাইখায়---” যদি স্বর্ণস্তুপে পড়ে যাই তাহলে আমরা স্বর্ণ কুড়িয়ে নিতে পারব। অর্থাৎ জীবনে অনেক স্বর্ণালী দিক রয়েছে, সুযোগ রয়েছে, ক্ষেত্র রয়েছে। আমরা যদি নিজের জীবনকে সেদিকে পরিচালিত করতে পারি তাহলে আমরা একটি সোনালী জীবনের অধিকারী হবো। 

অনুরূপভাবে আমরা আমাদের কর্মদক্ষতা, সচেতনতা অনুযায়ী একটি রূপালি জীবন, সমৃদ্ধজীবন পেতে পারি। তাই সদা সতর্ক ও সচেতন থেকে লক্ষ্য স্থির রেখে সম্মুখস্থ প্রতিকূলতা ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে প্রত্যাশিত সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে হবে।
 
“তকখি বুলূংগ কালাইখায়,
ওয়াকখি বুলূংগ কালাইখায়,
মেনাম মেনাম মেনাম!!!"
 
“মুরগীর বিষ্ঠায় পড়ে গেলে,
শুকরের বিষ্ঠায় পড়ে গেলে,
দুর্গন্ধময় হয়ে যাবে।”
 
গত্যন্তরে, আমরা যদি অসচেতন হই, অবহেলা করি বা জেনে-শুনে  পুঁতিময় দুর্গন্ধযুক্ত  স্থানকে বেছে নিই বা গন্তব্যে পৌছি অর্থাৎ কুসঙ্গঁ, কুকর্ম বা জীবনের অন্ধকারদিককে বেছে নিই, তাহলে জীবনটা হবে অন্ধকারময়, দুর্গন্ধযুক্ত, গ্লানিময়।

কত গভীর তাৎপর্যময় জীবন দর্শন যে এই সামান্য শিশুতোষ ছড়ার ভিতর লুকায়িত রয়েছে আমরা অনেক সময় তা অনুভব করতে পারিনা। তাই এই ছড়াটি আমরা যেমন শিশুদের অনাবিল আনন্দ দেওয়ার জন্য বার বার তাদের কাছে উপস্থাপন করি, তাদেরকে যুক্ত করি, তেমনিভাবে বড় শিশুদের নিকটও বার বার ছড়াটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও লুকায়িত জীবন দর্শনটিকে উপস্থাপন করতে পারি তাহলে তারা তাদের জীবন গঠনের এবং জীবন যাপনের এক অমূল্য নিদের্শনা নিয়ে বড় হতে পারবে।

এমনিভাবে ত্রিপুরাদের জনজীবনে প্রচলিত অনেক নৃত্য-গীতি, ছড়া ও বিভিন্ন নৈপুন্য প্রদর্শনী শিল্পের মধ্যে লুকায়িত রয়েছে অনেক মূল্যমান জীবন দর্শন। যেগুলোর বিশ্লেষণ ও উপলদ্ধির মাধ্যমে আমরা হতে পারি আরও সমৃদ্ধ ও ঋদ্ধ। তাই এই বিশ্লেষণ, পাঠোদ্ধার এবং উপস্থাপনের জন্য আমাদেরকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।





Comments

Popular posts from this blog

Implementing Primary School Bilingual Education in the Minority Languages of the Chittagong Hill Tracts, Bangladesh: Policy Issues

Implementing Primary School Bilingual Education in the Minority Languages of the Chittagong Hill Tracts, Bangladesh: Policy Issues Borendra Lal Tripura Bachelor of Arts (Honours) in English - Dhaka University Bangladesh 1997   Master of Arts in English Literature – Dhaka University Bangladesh 1998 Master of Education (TESOL International -  Monash University Australia 2003   August 2008 Submitted in partial fulfillment of  the requirements for the Master of Education Monash University Table of Contents Abstract ------------------------------------------------------------------------ 3 Chapter 1 ---------------------------------------------------------------------- 4 Introduction ------------------------------------------------------------------- 4 1.1 Background of the Study --------------------------------------------------- 4 1.2 Rationale and Objectives -----------...

KOKBOROK KOKLOP- POEMS IN KOKBOROK/TRIPURA LANGUAGE BY BORENDRA LAL TRIPURA

Jabuini Saal - Tabokni Saal By Borendra Lal Tripura Jabuilai chini moyal-o toksa tokmului poongo Chagoi paiya nungoi paiya khago khatungma fai-o. Sumbur sub-oi dangdung tam-oi rachap-jalai-o Sikalarok khatung-lai-oi sungui-jalai-o. Taboklai nobar-o bana kakham bakhai-se man-o Rachapni musupni kha failia; halama-se kufungni nai-o. Khanalia aro toksa khorang, perlia khumbar kwchung Palokgoi thang-kha sumbur supnani, palokgoi thangka daandung. Silai khorang-se gurum-o taklai, khanago khobor kutung, Befugo tama onglang-no bakha-se thuktuk thuktuk. Hoogba haba khai-oi chalai-o jabui jabui-o chwng; Birok charok kirima koroi hemfung thaangfung saichung. Taboklai tokling gudama-se pwngjak, Masa mifoor sial sukuru lam-o chomlai-oi tongjak; Saichung laam hamkhai kathang fara fara Bok-bai romjagoi waljak. Paikha paikha chini jabuini saal gaammarok paikha. Nokha kuchukgo chumui uruktoi, Bojangbo urukgoi thaangkha. (March   8, 2011/ Dhaka ) Tipara-sa By Borendra Lal Tripura Tipara-...